গাইবান্ধায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে হত্যা

ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে হত্যা
নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুন

বাড়ি ভর্তি শোকার্ত স্বজনদের ভিড়। এর মধ্যে বুকফাটা আহাজারি করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুনের মা ও স্ত্রী। তাদের দুজনের মাঝে বসে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল মামুনের একমাত্র মেয়ে আয়াত। সবার আহাজারি দেখে হতবাক পাঁচ বছরের শিশুটির দুটি চোখ যেন খুঁজে ফিরছিল বাবাকে। শুক্রবার গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় ধাপেরহাট ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এমন শোকাতুর পরিবেশ। গাইবান্ধায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে হত্যা ।

 

৩০ বছর বয়সী মামুনকে বৃহস্পতিবার বিকালে ধাপরেহাট জামদানি সড়ক মোড়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। তার মা রনজিনা বেগম বলেন, “মামুনকে নৃশংসভাবে হত্যার পরও দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত থাকেনি। এরপর বাড়িতে এসে হামলা করে ভাঙচুর করেছে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।” দুর্বৃত্তরা মামলা না করার জন্যও ভয়ভীতি দেখিয়েছে। মামলা করলে মেরে ফেলা হবে এই হুমকি দিয়ে চলে গেছে।

 

ছেলেকে দুর্বৃত্তরা ‘খুব কষ্ট দিয়ে’ মেরেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা মামুনের পায়ের রগ কেটেছে, পায়ের তালুর গোস্ত কেটেছে, হাঁটুর মালায় কেটে ফেলেছে, হাতের কব্জি ও রগ কেটেছে। মাথাতেও আঘাত করেছে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা করেছে।” সন্তানহারা এই মা বলেন, “আমি এই হত্যার বিচার চাই, হত্যারকারীদের ফাঁসি চাই।”

 

মামুনের মায়ের পাশেই বসে থাকা তার স্ত্রী দিনা খাতুন বলেন, “বৃহস্পতিবার আমি ও মা (মামুনের মা) রোজা রেখেছিলাম। মামুন বাড়িতে ছিল। হঠাৎ বিকেল সোয়া তিনটার দিকে মামুনের একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে সে ধাপেরহাট বাজারে যায়। “এ সময় তাকে আমি আমাদের জন্য ইফতারি পাঠানোর কথা বলি। সে বলে যায়, তোমাদের ইফতারি যথাসময়ে পাঠিয়ে দিব। কিন্তু বিকাল পাঁচটার পর খবর পাই, ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।” কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুনের পরিবার

বিছানায় আহাজারি করছিলেন মামুনের বড় ভাই রকি মন্ডল। মামুন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৩-৪ বছর থেকে মামুন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল না। দীর্ঘদিন থেকে ক্রিকেট খেলা নিয়েই তার ব্যস্ততা ছিল। সে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সিলেট স্ট্রাইকার্সের নেট ফাস্ট বোলার ছিল। তিনি ভাই হত্যার বিচার চান।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ধাপরেহাট জামদানি সড়ক মোড় এলাকায় মামুনের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করা হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে পাশের রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

 

পরে তার লাশ নিয়ে এলাকাবাসী ধাপেরহাট বন্দরে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার জুমার নামাজের পর গাইবান্ধা থেকে গ্রামের বাড়িতে মামুনের লাশ নিয়ে আসার পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। সবাই মামুনের স্মৃতি হাতড়ে কান্নাকাটি করছিলেন।

পরে বাদ আসর বিকাল সাড়ে ৪টায় স্থানীয় পীরেরহাট ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

 

শুক্রবার দুপুরে মামুন মণ্ডলের বাবা অব্দুল মান্নান মণ্ডল বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ থেকে ২২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজ উদ্দিন খন্দকার। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটক করতে অভিযান শুরু করেছে। তবে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলেও জানান ওসি।