গাজীপুরের মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা ! কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না গাজীপুরের মাদক সেবন, বিতরণ ও বিপণন। এ যেন এক ইস্পাত কঠিন সিন্ডিকেট। কোনো আইন শৃংখলা বাহিনী তথা যৌথ বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে এদের থামাতে। বিগত সরকারের সময় আওয়ামীলীগের নেতাদের হাত ধরে গড়ে উঠে এই কঠিন মাদক ব্যবসা সিন্ডিকেট।
টঙ্গী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো সদ্য প্রয়াত কমিশনার নুরুল ইসলাম নুরু। নুরু ছিল সাবেক এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। এলাকার লোকমুখে শোনা যায় এই মাদক ব্যবসা থেকে সাবেক এমপি রাসেল ও তার চাচা ভাগ পেতো। মূল ব্যবসা পরিচালিত হতো টঙ্গী স্টেশন এলাকার বস্তি থেকে। সেখানে ইয়াবা, চোলাই মদ, হেরোইন,গাজা, বিদেশী মদ, আইস সহ সব ধরনের নেশাদ্রব্য মিলতো প্রকাশ্যে, এখন কিছুটা লোকচুরি করে চলছে। তবে থেমে নেই মাদক ব্যবসা।
কালীগঞ্জের মাদক সিন্ডিকেট:
কালীগঞ্জের মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান সারওয়ার উদ্দিন উজ্জ্বল ওরফে কামরুজ্জামান উজ্জ্বল ওরফে ফেন্সি উজ্জ্বল। সেই ১৯৯১ সালে কলেজে পড়া কালীন উজ্জ্বল নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করতো। তারপর আস্তে আস্তে মাদক বিপণনে জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা বিপণন কালে হাতেনাতে ডিবি পুলিশের কাছে ধরা পড়েন উজ্জ্বল। এটা ২০১৯ সালে যার কালীগঞ্জ থানার মামলা নম্বর ২৮ তারিখ ২০/১০/২০১৯ ইং। তখন আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তাকে স্থানীয় এমপি মেহের আফরোজ চুমকি সহায়তা করেনি। অবশ্য পরবর্তীতে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেন সাবেক এমপি চুমকি।
উজ্জ্বল মাদক ব্যবসা, জমি দখল, লোক দিয়ে মানুষ হত্যার মতো কাজ করাতো। তার সঙ্গী ছিল কুখ্যাত ডাকাত তাহের আলী। সম্প্রতি তাহের আলী মারা গেছেন। বর্তমানে উজ্জ্বল সৌদি আরব ও দুবাই থেকে সারা গাজীপুরের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। কালীগঞ্জের মাদক ব্যবসা তদারকী করছে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মাওলা আলী রাজীব ও উজ্জ্বলের ছেলে হামজা, উজ্জ্বলের ছোট ভাই আরাফাত।
কালীগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা মাদক বিপণন করছে, তার মধ্যে কালীগঞ্জ – কাপাসিয়া মোড় এলাকা, ফুলদি সল্লার মোড়, ভাটিরা ব্রিজ, নলি ব্রিজ এবং উজ্জ্বলের ছোট ভাই আরাফাতের চায়ের দোকান, রাজীবের দোকান ও বাংলো । মাওলা আলী রাজীব মূলত ডিলার হিসাবে বড় চালান বিপণন করে। ইয়াবা, গাজা, বিদেশী মদ, চোলাই মদ খুচরা বিপণন করে উজ্জ্বলের ছোট ভাই আরাফাত ও ছেলে হামজা। কখন কোথা থেকে মাদক গ্রহণ ও কাদেরকে দিবে তা মূলত রাজীব করে।
রাজীব উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ইমো মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করে। এই সিন্ডিকেট থেকে টাকা পেতো সাবেক এমপি চুমকি। ২০২৪ এর নির্বাচনে চুমকি পরাজিত হলে উজ্জ্বলের নির্দেশে মাওলা আলী রাজীব সাবেক এমপি আখতারুজ্জামানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। থানা পুলিশ ও রাজনীতি কন্ট্রোল করতে উজ্জ্বল নিয়মিত লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে।
এবছরের প্রথম দিকে মামলার পলাতক আসামী দেশে আসলেও রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করেনি। উজ্জ্বলের সেকেন্ড ইন কমান্ড মাওলা আলী রাজীব পুরো গাজীপুরের মাদক বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। তার নিজস্ব পেইড বাহিনী দিয়ে শুধু মাদক ব্যবসা ই নয় জমি দখল, অন্যের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে নামজারি করা সবই করছে এই রাজীব।
সরকার পরিবর্তনের পর টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন থানায় বিএনপির স্থানীয় (ঢাকার উত্তরায় থাকে) এক নেতাকে ম্যানেজ করে বিএনপি কর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। কথিত আছে বিএনপির ওই নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ফারুকের নামেও বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়েছে।
বিএনপি’র ওই নেতার রক্ষিতা হিসাবে পরিচিত রাজীবের বোন মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী উম্মুল জাহান ফ্লোরা। সাবেক এমপি চুমকি আওয়ামীলীগ নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য যে কয়জন নারীকে ব্যবহার করতো তাদের মাঝে এই ফ্লোরা অন্যতম। এলাকায় কথিত আছে উম্মুল জাহান ফ্লোরাকে ডিএনএ টেস্ট করালে তার দেহে কয়েকশত পুরুষের অস্তিত্ব মিলবে। ফ্লোরার স্বামী প্রবাসী হওয়ায় ব্যবসা চালিয়েছে পুরো আওয়ামী সরকার আমল।
কালীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামীন খান শামীম ওসমানের সাথে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি খুনের মামলায় (২৩ নং আসামী) পলাতক। এই আলামীন খান ই সকল অপকর্মের গড ফাদার। আলামীন খান আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাকালীন জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। সে সময় ঘুষের বিনিময়ে স্কুলে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে একটি অডিও ক্লিপ এলাকায় ভীষন ভাইরাল হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে লক্ষ লক্ষ নগদ টাকা। ঢাকায় নামে বেনামে রয়েছে একাধিক প্লট। আলামীন খান মাওলা আলী রাজীব এর চাচা।
কালীগঞ্জের সাধারণ জনগণের মনে প্রশ্ন এখন এই প্রশাসন কি পারবে এই সিন্ডিকেটের (গাজীপুরের মাদক সিডিকেট) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে! না কি মাদকের কোটি টাকার কাছে রফাদফা হয়ে পূর্বের ন্যায় নতি স্বীকার করবে?